ঢাকা,শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক গোলাগালি, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, রণক্ষেত্র পৌরসদর, আধঘন্টা মহাসড়ক যোগাযোগ বন্ধ

Chakaria Picture 20-03-2016নিজsongarsস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে অনেকটা উৎসবের আমেজে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন সাধারণ ভোটাররা।  রোববার অনুষ্টিত নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি, ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া চারটি কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে কয়েকদফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মারধরে গুরুতর আহত হয়েছেন ৬নম্বর ওয়ার্ডের দুই কাউন্সিলর প্রার্থী জয়নাল আবেদীন ও জালাল উদ্দিন।

আজ সকাল ১১টার দিকে চকরিয়া পৌর সদরের ৮নং ওয়ার্ডে চিরিঙ্গা মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র আ.লীগ ও বিএনপি সমর্থিত ২ কাউন্সিলর প্রার্থী মুজিবুর রহমান ও শহিদুল ইসলাম ফোরকানের সমর্থির ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১৩জন ভোটার আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এসময় আধা ঘন্টা চট্রগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক যোগায়োগ বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে পুলিশ-বিজিবি এসে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এলাকায় দু‘পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
সরেজমিনে জানা গেছে,  রোববার পৌরসভার ১৮টি কেন্দ্রে সকাল আটটা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। দিনের শুরুতে প্রত্যেক কেন্দ্রে ব্যাপক ভোটার উপস্থিতির দেখা মেলে। এরই মধ্যে প্রায় কেন্দ্রে বড় ধরণের কোন ঘটনা ছাড়াই নির্বাচনী কার্যক্রম চলে। দুপুর নাগাদ কেন্দ্র গুলোতে ভোটার সংখ্যা কমতে থাকে। তবে ১২টার দিকে বেশ কটি কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে কয়েকদফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তারমধ্যে ১নম্বর ওয়ার্ডের আমানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থী বিএনপি নেতা মকছুদুল হক মধু ও তার সমর্থকরা কেন্দ্রে ঢুকে এককভাবে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্টা করেন। খবর পেয়ে ওই ওয়ার্ডের আওয়ামীলীগের কাউন্সিলর প্রার্থী সাহাব উদ্দিন সওদাগর ও তার সমর্থকরা বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করেন। এসময় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে সংর্ঘষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে কাউন্সিলর প্রার্থী মকছুদুল হক মধুর সমর্থকরা কেন্দ্রে ঢুকে একটি ব্যালট ভর্তি বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে যায়। ঘটনার পরপর র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যদের সহায়তায় কর্তব্যরত ম্যাজিষ্ট্রেট ভোট কেন্দ্রের পাশের ক্ষেত থেকে ওই ব্যালট বাক্সটি উদ্ধার করেন। পরে রির্টানিং কর্মকর্তার নির্দেশে প্রিসাডিং কর্মকর্তা ওই কেন্দ্রের ভোট গ্রহন বন্ধ ঘোষনা করেন।
এদিকে ১নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামীলীগের কাউন্সিলর প্রার্থী সাহাব উদ্দিন সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্রে ঢুকে প্রভাব বিস্তার করে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মকছুদুল হক মধু ও তার সমর্থকরা উটপাখি প্রতীক ব্যালট পেপারে সিল মারেন। বিকেল ৩টার দিকে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসলে প্রায় তিন ঘন্টা পর ওই কেন্দ্রে ফের ভোট গ্রহন শুরু করেন প্রিসাডিং কর্মকর্তা মোসলেম উদ্দিন সিরাজী। ভোট গ্রহন শুরুর পর দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ফের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। জানতে চাইলে ১নম্বর ওয়ার্ডের আমানচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা এসআই দেবাশীষ সরকার বলেন, বিকেলে ভোট গ্রহন শুরু হওয়ার পর দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ফের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে ওইসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হন।
এর আগে বেলা ১টার দিকে ৮নম্বর ওয়ার্ডের চকরিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিন লক্ষ্যারচর সিকদারপাড়া, ৯নম্বর ওয়ার্ডের পুকপুকুরিয়া পৌর বিদ্যা নিকেতন স্কুল কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ৯নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী সেলিম উদ্দিন সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন, ওয়ার্ডের দুটি কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদেরকে বের করে দেন আওয়ামীলীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর লোকজন। অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামীলীগের কাউন্সিলর প্রার্থী ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির বলেন, ওয়ার্ডের দুটি কেন্দ্রে শান্তিপুর্ণ ভাবে ভোট গ্রহন চলে। তবে আগেরদিন রাত আনুমানিক দুইটার দিকে মুঠোফোনে তাকে বাড়ি থেকে ঢেকে নিয়ে মুখোশধারী দৃর্বৃত্তরা তার উপর হামলা চালায়। এসময় কুপিয়ে তাকে গুরুতর জখম করা হয়। এ ঘটনায় তিনি প্রতিদ্বন্দি অপর কাউন্সিলর প্রার্থীদেরকে দায়ী করেছেন।

চকরিয়ার হালকাকারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, অনেক নারী ভোটার লাইনে দাড়িয়ে আছে ভোট দেওয়ার জন্য কিন্তু সংগ্রহের গতি কম হওয়ায় অনেকে ভোট দিতে পাচ্ছে না। ১নং ওয়ার্ডের আর্মী ক্যাম্প সংলগ্ন র্আ রায়েদ কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে শতশত ভোটার লাইনে দাড়িঁয়ে আছে। এ কেন্দ্রটি আ.লীগের প্রার্থী আলমগীর চৌধুরীর শাশুর বাড়ির লোকজনের ভোট কেন্দ্র হওয়ায় তারা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ভোট কেন্দ্রের ২য় তলার মহিলা বুথে কয়েক আ.লীগ সমর্থিত প্রার্থীর লোকজনেরা ভোটারদের নৌকায় ভোট দিতে বাদ্য করা হচ্ছে বলেও ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। চকরিয়া পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের ১৮ টি কেন্দ্রই কয়েকজন প্রার্থী ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে দাবি করলেও প্রশাসন, সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের লক্ষ্যে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
জানা গেছে, ২০মার্চ অনুষ্টিত চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে ১৮টি কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহনের লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়। এদিন প্রতিটি কেন্দ্রে ১৪ জন আনসার ও অফিসারসহ ৯ জন পুলিশ দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশের ৬টি মোবাইল টিম, ৪টি স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং ৬৪ সদস্যের ২প্লাটুন বিজিবি ও র‌্যাবের ৬টি টিম প্রতিটি কেন্দ্রের ভেতরে বাইরে অবস্থান করে। সবমিলিয়ে আইন শৃঙ্খলঅ বাহিনী সাড়ে পাঁচশত সদস্য নির্বাচনে দায়িত্বে ছিলেন। নির্বাচনে ২০জন পিসাডিং অফিসার, ১৩০জন সহকারি পিসাডিং অফিসার ও ২৫০জন পোলিং অফিসার ১৮টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহনের দায়িত্ব পালন করেন।
জানতে চাইলে চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত রির্টানিং কর্মকর্তা ও কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো.মেছবাহ উদ্দিন বলেন, বড় ধরণের কোন ঘটনা ছাড়াই গতকাল রোববার চকরিয়া পৌরসভার ১৮টি কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহন সম্পন্ন হয়েছে। সকালের দিকে বেশির ভাগ কেন্দ্রে ব্যাপক ভোটার উপস্থিতি ছিল। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে দুপুরে ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করে বাড়ি ফিরে যান। তিনি বলেন, তবে কয়েকটি কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে সামান্য গোলযোগ দেখা দিলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তাৎক্ষনিক প্রচেষ্টায় ফের ভোট কেন্দ্র গুলোতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে।

চকরিয়া পৌরসভার প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ২২ জন করে পুলিশ ও আনসার সদস্য, র‌্যাবের ৪টি দল, এক প্লাটুন বিজিবি সদ্য মোতায়েন আছে। চকরিয়ায় মোট ভোটকেন্দ্র ১৮ টি। মোট ভোটার সংখ্যা ৪২৩০৬জন। ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাাচন করছেন ৬৭জন প্রার্থী।
তাদের মধ্যে তিনি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ২০জন নারী কাউন্সিলর ও ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৪৭জন কাউন্সিলর প্রার্থী। অপরদিকে মহেশখালী পৌরসভায় এবার মোট ভোটার রয়েছেন ১৭৯৬০ জন। এতে পুরুষ ভোটার ৯ হাজার ৪১৭ এবং নারী ভোটার ৮ হাজার ৫৪৩ জন। যে কোন ধরনের অপ্রিতীকর ঘটনা এড়াতে প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।

পাঠকের মতামত: